প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় রাজবাড়ী কেন্দ্রীয়  বাস টার্মিনাল। তবে নির্মাণের প্রায় ৩০ বছর হতে চললেও এখনো চালু করা সম্ভব হয়নি টার্মিনালটি। ফলে ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মূল্যবান আসবাবপত্র ও সরঞ্জামাদি। এছাড়া সন্ধ্যা হলেই সেখানে বসে মাদকের আড্ডাও।

জানা গেছে, ১৯৯২-৯৩ অর্থ বছরে ১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ব্যয়ে রাজবাড়ী শহর থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরে শ্রীপুরে বাস টার্মিনালটি নির্মাণ করে সরকার। ২০০০ সালে টার্মিনালটি পৌরসভার কাছে হস্তান্তর করা হয়। তবে নির্মাণের পর থেকে এখন পর্যন্ত এটি বাস টার্মিনাল হিসাবে ব্যবহার হয়নি। ২০০৭ সালে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে টার্মিনালটি চালু করা হয়েছিল।

ওই সময় শহরের মুরগি ফার্মে আরেকটি বাস স্টপেজ গড়ে ওঠে। সে সময় যাত্রীদের সুবিধার্থে অটোরিকশার টাউন সার্ভিস চালু করা হয়েছিল। সেটি জনপ্রিয়তাও পেয়েছিল। সেই টাউন সার্ভিস এখনও চালু আছে। তবে চালু নেই টার্মিনাল।

পরিবহণ সমিতি সূত্রে জানা যায়, রাজবাড়ী থেকে মোট দশটি রুটে বাস চলাচল করে। এগুলো হলো রাজবাড়ী-ঢাকা, রাজবাড়ী-বালিয়াকান্দি হয়ে মধুখালী, রাজবাড়ী-বরিশাল, রাজবাড়ী-যশোর, রাজবাড়ী-বগুড়া, রাজবাড়ী-ফরিদপুর, রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী-দৌলতদিয়া, রাজবাড়ী-রাজশাহী এবং রাজবাড়ী-বগুড়া ।

বাস মালিক কর্তৃপক্ষ বলছে, দূরপাল্লার কোনো বাসই রাজবাড়ী থেকে ছাড়েনা। শুধু স্টপেজ রয়েছে। আগে বিভিন্ন বাসের কাউন্টার বিভিন্ন স্থানে থাকায় যাত্রীদের দুর্ভোগের বিষয়টি মাথায় রেখে শহরের বড়পুলে মালিক সমিতির ভবনে সব বাসের কাউন্টার করা হয়। যেখানে যাত্রীদের বসার ব্যবস্থার পাশাপাশি রয়েছে শোচাগারের ব্যবস্থা। কিন্তু নির্মাণ করা ওই বাস টার্মিনালে যাত্রীদের বসার স্থান নেই। একই সঙ্গে টার্মিনালটির শৌচাগারও ব্যবহারের অনুপযোগী।

রাজবাড়ী পরিবহন মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মুরাদ হাসান মৃধা বলেন, ‘রাজবাড়ীতে কোনো বাইপাস সড়ক নেই। বাসগুলো চলাচল করে শহরের উপর দিয়ে। যাত্রীরা সাধারণত মুরগীর ফার্ম ও বড়পুল বাস স্টপেজ থেকে বাসে উঠে থাকে। একটি বাইপাস সড়ক থাকলে যাত্রীরা টার্মিনালে যেতে বাধ্য হতো।’

টার্মিনালের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেখানে গড়ে ওঠা খাবার হোটেলসহ বিভিন্ন ধরনের দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। যেগুলো রয়ে গেছে সেগুলোর ব্যবসার গতি নেই। একাধিক ব্যবসায়ী জানান, তারা অনেক আশা নিয়ে দোকান দিয়েছিলেন টার্মিনালে। কিন্তু আশা আশাই থেকে গেছে। সারাদিন বসে থাকলেও মেলেনা কাস্টমার। ফলে দোকানভাড়া দেওয়া কষ্টকর হয়ে ওঠে।

পরিবহন শ্রমিকরা জানান, বাস টার্মিনালটি চালু হলে তাদেরও সুবিধা হতো। শহরের মধ্যে দুই থেকে তিন জায়গায় বাস থামিয়ে যাত্রী উঠাতে নামাতে হয়। এটি আর হতো না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন জানান, টার্মিনালটি পরিত্যক্ত হওয়ার কারণে মাদকসেবীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। সন্ধ্যা হলেই মাদকসেবীরা এখানে মাদক নিয়ে আসর জমায়।

রাজবাড়ী পৌরসভা সূত্র জানায়, পৌর বাস টার্মিনালে একশটির মতো দোকান রয়েছে। এসব দোকানের ভাড়া একশ থেকে তিনশ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া প্রতি বছরে ইজারা দেওয়া হয় টার্মিনালটি। এইভাবেই বাস টার্মিনালটি থেকে আয় করা হয়।

রাজবাড়ী পৌর মেয়র আলমগীর শেখ তিতু বলেন, ‘আমরা চাই টার্মিনালটি চালু হোক। বাস মালিক সমিতির সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি। যাত্রীদেরও সচেতন হওয়ার একটি বিষয় রয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে টার্মিনালটি যাতে চালু হয় সেজন্য সবাইকে মিলে একটি উদ্দ্যেগ গ্রহণ করতে হবে।

 

কলমকথা/সাথী